আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট সফল ভাবে বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা তথা উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে আরেক ধাপ অতিক্রম করবে।
তিনি বলেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, সফল রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নিখাদ দেশপ্রেম, জণগণের প্রতি অকৃতিম ভালোবাসা, দৃঢ় মনোবল, সততা, নিষ্ঠা এবং সাহসী নেতৃত্বে যে কোন জাতীয় ও আন্তর্জতিক ষড়যন্ত্র-সঙ্কট মোকাবিলা করা সম্ভব। শেখ হাসিনার পরিকল্পনায় প্রণিত অষ্টম পঞ্চমবার্ষিকী পরিকল্পনা (২০২১-২৫), প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০২১-৪১ এবং ব-দ্বীপ পরিকল্পনা (২১০০)-এর আলোকে বর্তমান বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে।
ওবায়দুল কাদের আজ শনিবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন। দলের পক্ষ্য থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতেই এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
আওয়ামী লীগের পক্ষ্য থেকে বাজেটকে স্বাগত জানিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এই বাজেটকে স্বাগত জানাচ্ছি। কোভিড উত্তর পরিস্থিতি এবং ইউরোপের চলমান যুদ্ধ বৈশ্বিক অর্থনীতির উপর যে চাপ সৃষ্টি করেছে তা বিবেচনায় নিয়ে বলা যায় প্রস্তাবিত বাজেটটি সম্পূর্ণভাবে বাস্তবসম্মত ও সময়োপযোগী।’
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে সম্পূর্ণ আত্মনির্ভরশীল এক জাতি গঠনের প্রত্যয়ে বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর বাজেট। আমরা গণমুখী ও জনকল্যাণকর বাজেট উপস্থাপনের জন্য শেখ হাসিনা এবং অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের প্রতিধন্যবাদ জানাচ্ছি।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে শেখ হাসিনা ঘোষিত আওয়ামী লীগের ইশতেহার ‘দিন বদলের সনদ’ বাংলাদেশে সম্ভাবনার এক স্বর্ণদুয়ার উন্মোচন করে। দুই-তৃতীয়াংশের বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন, বাস্তবায়ন করেন রূপকল্প-২০২১। একইভাবে ‘শান্তি-গণতন্ত্র উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’ শিরোনামের ইশতেহারে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ২০১৪ সালে টানা দ্বিতীয় বারের মতো সরকার গঠন করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ ইশতেহার নিয়ে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে এবং শেখ হাসিনার চতুর্থবারের মতো সরকার প্রধানের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। গত ১৩ বছর ধরে শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে এক সোনালী অধ্যায় অতিক্রম করে চলেছে। বাংলাদেশ আজ সঙ্কট মোকাবিলায় বিশ্বের যে কোন দেশের কাছে এক অনুকরণীয় রাষ্ট্র। আর শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সকল সঙ্কটের একমাত্র পরিত্রাণ কর্তা।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বর্তমান বিশ্ব অর্থনীতির বাস্তবতায় পৌনে ৭ লাখ কোটি টাকার এই বাজেট শেখ হাসিনা’র নেতৃত্বে অর্জিত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতার প্রতিফলন। শেখ হাসিনার নিরবচ্ছিন্ন নেতৃত্বের কারণেই বাংলাদেশের অর্থনীতি গত দেড় দশকে একটি শাক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে।
‘বেগম খালেদা জিয়ার দেশের বাইরে চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া হোক। অন্যথায় সব দায়দায়িত্ব সরকারকে বহন করতে হবে।’ মির্জা ফখরুল ইসলামের এমন বক্তব্যের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সরকার কেন দায়দায়িত্ব নেবে। খালেদা জিয়া কি ফখরুল ইসলামদের আন্দোলনে মুক্ত হয়েছেন? শেখ হাসিনার উদারতা, মানবিকতায় খালেদা জিয়া মুক্ত হয়ে বাসায় আছেন। তার চিকিৎসার ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা নেই। প্রয়োজন হলে বাইরে থেকে চিকিৎসক আনুক, অসুবিধা নেই। এ ব্যাপারটি আইন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেখছে, আমি আর কিছু বলতে চাই না।’
করের মাধ্যমে পাচার হওয়ায় ফেরত আনার ঘোষণায় পাচারকারীরা আরও উৎসাহী হবে কিনা জানকে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এটা ঠিক সেভাবে দেখলে হবে না। দেশের অনেক টাকা পাচার হয়ে গেছে। অনেক দেশে এ ধরনের সুযোগ দেওয়া হয়। আমরাও সেই সুযোগটা দিচ্ছি। দেখি, যদি এই সুযোগের সুফল না আসে তাহলে আমরা সুযোগ উঠিয়ে নেব। এই বাজেটের দেওয়া সুযোগে আমরা সুফল পেতে পারি।’
অর্থপাচার বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, মির্জা ফখরুলসহ দেশের একটি চিহ্নিত মহল ক্রমাগতভাবে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অর্থ পাচার হচ্ছে বলে এমনতর অভিযোগ করতেন। তাদের বক্তব্য যদি সত্য হিসাবে ধরে নেই, তাহলে ৭ শতাংশ করদানের মাধ্যমে যদি কেউ টাকা দেশে নিয়ে আসে তাহলে তো মির্জা ফখরুল সাহেবদের খুশি হওয়ায়র কথা। কিন্তু এখন তারা কেন অভিযোগ করছেন? অর্থপাচারের অভিযোগ তুলবেন, আর যখন আপনাদের কথা অনুযায়ি সে টাকা ফেরত আসে তখনও অভিযোগ করবেন সেটা তো আপনাদের দ্বিচারিতা। তিনি বলেন, আমাকে বলতে হয় মির্জা ফখরুল সাহেব আপনি কী ভুলে গেছেন, আপনার নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দুই দফায় দেশের প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় অনৈতিক ও অবৈধভাবে অর্জিত প্রায় দেড় কোটি কালো টাকা সাদা করেছিলেন এবং কর অফিসে জরিমানা হিসাবে ৩৪ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের মানুষ জানে কারা দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে। বেগম খালেদা জিয়া দুই পুত্র দুর্নীতির টাকা সিঙ্গাপুর ও আমেরিকায় পাচার করেছে। পরবর্তীতে সরকার যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে অংশিক টাকা দেশে ফেরত আনতে পেরেছে।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ, ড. আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ও ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন ও এস এম কামাল হোসেন, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃনাল কান্তি দাস, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক সিদ্দুকুর রহমান, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়–য়া, কৃষি ও সমবায় সম্পাদক ফরিদুন্নহার লাইলী, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক শামসুর নাহার চাঁপা, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও রিয়াজুল কবির কাওছার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।