মনোয়ার হোসাইন
পাঁচটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেড়শ আসনে প্রার্থী পরিবর্তন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। আর এই প্রার্থী পরিবর্তনে মনোনয়ন ঝুঁকিতে রয়েছেন অন্তত দশজন মন্ত্রী। মনোনয়ন ঝুঁকিতে থাকা দশ জনের মধ্যে পাঁচ জনই বর্তমানে পূর্ণমন্ত্রী। সব আছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর লেপটপে
যাদের নিজ এলাকায় অবস্থান দূর্বল এবং জড়িয়ে পড়েছেন নানা রকম বিতর্কে। এদের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার নির্দয় হতে পারেন বলে জানা গেছে। জনপ্রিয়তা কমে গেছে অথবা দল বিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে, এমন প্রার্থীদের মনোনয়ন সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। এছাড়াও বয়সের ভারে নুয়ে পড়া প্রার্থীরাও আর মনোনয়ন পাবেন না বলে আলোচনা রয়েছে।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, এখনও নির্বাচনের এক বছরের বেশি সময় বাকি। এ সময়ের মধ্যে তারা তাদেরকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য সুযোগ পাবেন। তবে এই সময়ের মধ্যে তারা যদি বিতর্কের ঊর্ধ্বে উঠতে না পারেন এবং এলাকায় জনপ্রিয়তা পুনঃপ্রতিষ্ঠা না করতে পারেন সেক্ষেত্রে তাদের জন্য মনোনয়ন পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
যারা বাদ হতে পারেন এদের মধ্যে একজন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা। তার এলাকায় আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী অত্যন্ত শক্ত অবস্থান গ্রহণ করেছেন। তাছাড়া তার আত্মীয় এবং স্থানীয় সমর্থকদের বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ একাধিক অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে। এসব বিষয় প্রধানমন্ত্রীর নজরে এসেছে। প্রধানমন্ত্রীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এবং আস্থাভাজন হওয়ার পরও তিনি মনোনয়ন ঝুঁকিতে আছেন বলে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেছেন, জাহাঙ্গীর কবির নানকও শেখ হাসিনার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ, আস্থাভাজন ছিলেন। কিন্তু তারপরও ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন পাননি। কাজেই, যাকে এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ মনে করা হবে, যিনি এলাকায় ঐক্য ধওে রাখতে পারবেন না কিংবা বিতর্কিত হিসেবে আবির্ভূত হবেন, তাকে সরিয়ে দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোনো কার্পণ্য করবেন না।
সূত্র বলেছে, পূর্ণমন্ত্রীদের মধ্যে সিলেট অঞ্চলের একজন মন্ত্রী রয়েছেন, যিনি নানা কর্মকাণ্ডের জন্য আলোচিত, বিতর্কিত। সাম্প্রতিক সময়ে সিলেটেও তার বিরুদ্ধে একটা নতুন মেরুকরণ হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জের একজন এমপি যিনি এবার মন্ত্রী হয়েছেন। তার বিরুদ্ধেও এলাকায় ভূমি দখলসহ নানা অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। এই অভিযোগগুলো এখন প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে। তার বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের নেতৃবৃন্দ ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন এবং তিনিও মনোনয়ন ঝুঁকির মধ্যে আছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এছাড়াও সরকারের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী, যিনি গত নির্বাচনে মনোনয়ন ঝুঁকিতে ছিলেন, এলাকায় তার জনপ্রিয়তা কম ছিল বলে শেষ জরিপে ফলাফল এসেছিলো। কিন্তু তারপরও প্রধানমন্ত্রী তাকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। শুধু মনোনয়নই দেননি, মনোনয়নের পর তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। এবার তিনি নিজেও মনোনয়ন ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
এ ছাড়া অন্তত দুইজন প্রবীণ মন্ত্রী আছেন, যাদের একজন সিলেট অঞ্চলের। বার্ধক্যজনিত কারণে তারা এবার মনোনয়ন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। হয়তো শেষ পর্যন্ত তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ নাও করতে পারেন।
প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে উত্তরাঞ্চলের একজন প্রতিমন্ত্রী, ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা অঞ্চলের একজন প্রতিমন্ত্রী, খুলনা অঞ্চলের দুইজন প্রতিমন্ত্রী, বরিশাল অঞ্চলের একজন মন্ত্রীও মনোনয়ন ঝুঁকিতে রয়েছেন।