প্রবাহ ডেস্কঃ
মানবিক কারণে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে জেলখানার বাইরে থাকার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এখন বিএনপি বেশি বাড়াবাড়ি করলে খালেদা জিয়াকে আবারও জেলে পাঠিয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাজধানীতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনাসভায় বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) বিকেলে প্রধানমন্ত্রী এ হুঁশিয়ারি দেন। জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে ওই আলোচনাসভার আয়োজন করে আওয়ামী লীগ।
আলোচনাসভায় সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়া অসুস্থ, বয়োবৃদ্ধ। তার বোন, ভাই, বোনের জামাই আমার কাছে এসেছেন। আবেদন করেছেন। আমরা তার সাজা স্থগিত করে বাড়িতে থাকার সুযোগটা দিয়েছি। মানবিক কারণেই দিয়েছি। ’
আওয়ামী লীগ সভাপতি এ কথা বলার পরই আলোচনায় উপস্থিত দলের নেতাকর্মীরা সমস্বরে খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠানোর দাবি জানাতে থাকেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি বেশি বাড়াবাড়ি করলে আবার জেলে পাঠিয়ে দেব। কোনো চিন্তা করবেন না। ’
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার সাত বছর কারাদণ্ডের বিষয়টি উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘এই মামলা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের। তাদেরই প্রিয় লোকদের দেওয়া মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা হয়। সাত বছরের সাজা হয়েছে। এতিমদের নামে বিদেশ থেকে যে টাকা এসেছিল, তার একটি টাকাও এতিমরা পায়নি বা ওই ট্রাস্টের সব টাকা গেছে নিজের (খালেদা) অ্যাকাউন্টে। সেখানেও ধরা খেয়েছে এবং মামলা হয়েছে। ‘
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়ার আমলে কয়টা সরকার ছিল? প্রধানমন্ত্রীর অফিসে একটা, আর ওই হাওয়া ভবনে একটা। কোনো উন্নয়নকাজ হয়নি। …হাওয়া ভবনের টাকা না দিলে কেউ ব্যবসা করতে পারবে না। এক দফা হাওয়া ভবনে দিতে হবে, আরেক দফা প্রধানমন্ত্রীর অফিসে দিতে হবে। ‘
বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর জুলুম-নির্যাতনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা তো এর প্রতিশোধ নিতে যাইনি। আমরা আইনগতভাবে অপরাধীদের বিচার করেছি। আজ তাদের কী অবস্থা? আজ দেখি, গণতন্ত্র উদ্ধার করতে হবে। ‘
তিনি আরো বলেন, ‘যে দলের জন্ম সেনাশাসকের পকেট থেকে, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীদের দ্বারা যাদের জন্ম, তারা আবার গণতন্ত্র উদ্ধারটা কী করবে? সেটাই আমার প্রশ্ন। বিএনপির গণতন্ত্রের কথা শুনে কিছু লোক তাদের সঙ্গে তাল মেলাচ্ছে। এদের জ্ঞান-বুদ্ধি কোথায় থাকে? তারা কি বাস্তবতাটা বুঝতে পারে না? আর নেতৃত্ব কোথায়? বিএনপি লাফালাফি করছে, তাদের নেতা কই?’
বিএনপির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা কী দেখে স্বপ্ন দেখে, যারা মানুষের দুঃসময়ে এতটুকু কাজ করে না। কী দেখে তারা দাবি করে যে তাদের ভোট দিয়ে মানুষ একেবারে ভরিয়ে দেবে? এত সহজ নয়। আর ওই অবৈধ সরকারের আমলে গঠিত দলগুলো খুব লাফালাফি করে…খুব ভালো কথা। ‘
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বলেছি, শান্তিপূর্ণ মিছিল-মিটিং করো, আমরা কিছু বলব না। কিন্তু ওই লাঠিসোঁটা নিয়ে এসে ভাবসাব দেখানো, আর যদি একটা মানুষের গায়ে হাত দেয়, আমরা ছাড়ব না। তার কারণ হচ্ছে, এদের আন্দোলন মানে জ্বালাও-পোড়াও। তাদের আন্দোলন মানে অগ্নিসন্ত্রাস। ’
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ও ৩রা নভেম্বরের খুনিদের বিএনপি পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতার খুনিদের জিয়াউর রহমান বিদেশে চাকরি দিয়ে পুনর্বাসিত করলেও ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে তাদের বের করে দেয়। কিন্তু ২০০১ সালে খালেদা জিয়া খুনি খায়রুজ্জামানকে, যে ৩রা নভেম্বর জেলহত্যায়ও জড়িত, তাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চাকরি এবং প্রমোশন দেয়; মালয়েশিয়ায় হাইকমিশনার করেও পাঠায়। খুনি পাশাকে বিদেশে মৃত অবস্থায় প্রমোশন দেয় এবং তার ভাতা ও সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পরিবারকে দেয়। ‘
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সামনে নির্বাচন। আমরা মানুষের মন জয় করে এবং দেশের উন্নয়ন করেই নৌকার পক্ষে ভোট আনব। দেশের মানুষ আর সেই অশান্ত পরিবেশ চায় না। ’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তারেক রহমান রাজনীতি না করার মুচলেকা দিয়ে বিদেশে পালিয়ে গেছে। তারা অগ্নিসন্ত্রাস করে সাড়ে তিন হাজার মানুষকে দগ্ধ করেছে, শত শত মানুষকে পেট্রলবোমা মেরে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। যত কিছু ধ্বংসাত্মক কাজ করতেই তারা (বিএনপি) পারদর্শী। বিএনপি-জামায়াত জোটের সেই ভয়াল দুঃশাসন, অত্যাচার-নির্যাতন, হাওয়া ভবনের কথা কি দেশের জনগণ ভুলে যাবে? কেন দেশের জনগণ তাদের পাশে থাকবে?’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা বিনা মূল্যে ভ্যাকসিন দিয়েছি। শুধু ভ্যাকসিনই নয়, করোনার টেস্টও বিনা মূল্যে করা হচ্ছে। একেকটা ভ্যাকসিন ও করোনা টেস্ট করতে হাজার হাজার টাকা খরচ হয়। সেটি আমরা বিনা মূল্যে দিচ্ছি। কারণ আমাদের কাছে দেশের মানুষের জীবন রক্ষাই হচ্ছে বড় ব্যাপার। এমন অবস্থায় যদি বিএনপি ক্ষমতায় থাকত তবে ভ্যাকসিনের অভাবে হাজার হাজার লাশ পড়ে থাকত। ভ্যাকসিনের টাকা হাওয়া ভবন লুটে খেয়ে নিত। ’
যথাযোগ্য মর্যাদায় গতকাল রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে জেলহত্যা দিবস পালিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সকালে রাজধানীর ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে রক্ষিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান। সকাল ৭টায় তিনি প্রথমে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং জাতীয় চার নেতার স্মৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শনের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। পরে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে জাতির পিতার প্রতিকৃতির বেদিতে আবারও পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দেশে হত্যা, সন্ত্রাস ও রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের হোতা বিএনপি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে হত্যা, সন্ত্রাস চিরতরে বন্ধ করতে হবে। ‘
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহ্মুদ বলেন, ‘সাংঘর্ষিক রাজনীতিকে বিদায় দিতে বিএনপির অপরাজনীতি বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। ‘
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে গতকাল সকালে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টেব সব শহীদ ও ৩ নভেম্বর কারাগারে নির্মমভাবে নিহত জাতীয় নেতাদের সমাধিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, মিলাদ মাহফিল ও মোনাজাতের পর সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
বঙ্গবন্ধু ও জেল হত্যাকাণ্ডের জন্য জিয়াউর রহমানকে দায়ী করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশ থেকে ‘পলিটিকস অব কনফ্রন্টেশন’ চিরদিনের জন্য বিদায় দিতে হলে বিএনপির অপরাজনীতি বন্ধ হতে হবে। তা না হলে দেশে সাংঘর্ষিক রাজনীতি বন্ধ করা সম্ভব হবে না। “