প্রবাহ খেলাঃ
নির্দিষ্ট কাউকে ঘিরে দলের বাকি সবার মানববৃত্ত তৈরি করে দাঁড়ানোর দৃশ্য ক্রিকেট মাঠে নিয়মিতই। যেখানে বক্তা সাধারণত একজনই থাকেন, বাকি সবাই শ্রোতা। অ্যাডিলেইড ওভালের অদূরে সবুজে ছাওয়া আরেক মাঠে শুক্রবার সকালে বাংলাদেশ দলের অনুশীলন শুরুর আগে সে রকমই এক মানববৃত্তের মধ্যমণি টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট শ্রীধরন শ্রীরাম।
বিসিবির ক্রিকেট অপারেশনস কমিটির প্রধান জালাল ইউনুসের ভাষায় যা ‘গোল মিটিং’! সেখানে তিনি নিজেও ছিলেন, ক্রিকেটারদের বলা শ্রীরামের সব কথাও শুনেছেন।
বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার আগেই সব শেষ বলে মনে না করার বার্তাই সেখান থেকে দলের মাঝে ছড়িয়ে পড়তে দেখেছেন জালাল, ‘‘আজ সকালের গোল মিটিংয়ে শ্রীরাম অনেক কথাই বলেছেন ছেলেদের। এর মধ্যে মূল কথা ছিল, ‘তোমরা কে, কখন, কোন ফ্লাইটে দেশে ফিরবে—এসব মাথা থেকে একদমই বের করে দাও। ওসব না ভেবে যে একটি ম্যাচ আছে, সেটায় পুরোপুরি মনোযোগ দাও। জেতার জন্য নামো। ’ বুঝতেই পারছেন, আমরা এখনো আশা ছাড়িনি। ’’
ভারতের কাছে হারার পর সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন ফিকে হয়ে গেলেও গাণিতিক নানা সম্ভাবনার ক্ষীণ আশার বাতি টিমটিম করে হলেও জ্বলছে। বাংলাদেশ শিবিরের কাছে সেটি সুড়ঙ্গের শেষ আলোও। সেই আলোর উজ্জ্বলতায় নিজেদের রাঙাতে পেরিয়ে যেতে হবে বিশাল এক ছায়াপথও। শক্তি-সামর্থ্যে এগিয়ে থাকা পাকিস্তানও যখন শেষ চারে যাওয়ার জন্য মরণকামড় দিতে তৈরি, তখন অলীক কল্পনাকেও হার মানানোর লক্ষ্য বাংলাদেশের। সেমিফাইনাল খেলার অঙ্কে নিজেদের চেষ্টাই শেষ কথা নয়, আছে পরনির্ভরশীলতাও। দুয়েমিলে বিষয়টি এত জটিল হয়ে আছে যে আয়োজক আইসিসিও বোধ হয় বাংলাদেশের সম্ভাবনার শেষ দেখে ফেলেছে। এমনিতে এ রকম বিশ্ব আসর থেকে কোনো দল বিদায় নেওয়া মাত্রই তাদের দেশে ফেরার বিমান টিকিট ধরিয়ে দেয় সংস্থাটি। সাকিব আল হাসানদের এখনো ধরিয়ে দেয়নি, তবে ৭ অক্টোবর অ্যাডিলেইড থেকে ফিরতি ফ্লাইটের টিকিট বুকিং দিয়ে রাখাই যা বলার বলে দিচ্ছে!
এর আগের দিনই গ্রুপ টু-র শেষ তিনটি ম্যাচ থেকে ঠিক হবে কোন দুটো দল এখান থেকে সেমিফাইনালে যাবে। এই মুহূর্তে গাণিতিক সম্ভাবনায় টিকে আছে ছয় দলের পাঁচটিই। নেদারল্যান্ডস ছিটকে পড়েছে এরই মধ্যে। রবিবার মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এমসিজি) ভারতের মুখোমুখি হচ্ছে জিম্বাবুয়ে, আর অ্যাডিলেইড ওভালে বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচের আগেই নির্ধারিত হয়ে যাবে দক্ষিণ আফ্রিকা-নেদারল্যান্ডস লড়াইয়ের ভাগ্য। সাকিবদের জন্য এখন সেমিফাইনাল খেলার দুই রকম অঙ্ক। একটি এ রকম যে পাকিস্তানকে হারালে এবং প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ডাচরা জিতলে ৬ পয়েন্ট নিয়ে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টির বিশ্ব আসরে সেমিফাইনাল খেলবে বাংলাদেশ। সে ক্ষেত্রে ভারত-জিম্বাবুয়ে ম্যাচের ফলের দিকে আর তাকিয়ে থাকতে হবে না। তবে বাস্তবতা বলছে, ডাচদের কাছে টেম্বা বাভুমাদের হারের সম্ভাবনা ততখানি, যতখানি অস্ট্রেলিয়ান রুলস ফুটবল বা ফুটির বাংলাদেশের এক নম্বর খেলা হয়ে যাওয়ার!
আরো জটিল আরেকটি অঙ্কও আছে। দক্ষিণ আফ্রিকা নিজেদের শেষ ম্যাচ জিতলেও বাংলাদেশের সেমিফাইনাল স্বপ্ন সত্যি হওয়া সম্ভব। এই অঙ্কেও পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় বাধ্যতামূলক এবং জিততে হবে বিপুল ব্যবধানে। সে ক্ষেত্রে ভারতকেও জিম্বাবুয়ের কাছে গো-হারা হারতে হবে। তখন বাংলাদেশ ও ভারতের পয়েন্ট হবে সমান ৬, বিবেচনায় আসবে রান রেট। শেষ ম্যাচের আগে বাংলাদেশের রান রেট যেখানে -১.২৭৬, ইতিমধ্যেই ৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে থাকা ভারতের সেখানে +০.৭৩০! এই অঙ্ক এর মধ্যেই সব সম্ভাবনা বিলীন হয়ে যাওয়ার। তবু আশা আছে বাংলাদেশের।
সেই আশা অলৌকিক কিছুরই। কারেন রোল্টন ওভালে শুক্রবার সাড়ে তিন ঘণ্টার অনুশীলনের শেষে এসে তাসকিন আহমেদও বলে গেলেন সেরকমই, ‘এই গ্রুপে দেখেন, সব ম্যাচই ইন্টারেস্টিং হচ্ছে। এখনো যেকোনো কিছুই ঘটতে পারে। অলৌকিক কিছু হয়েও তো যেতে পারে। ’ ঘটলে ঘটবে, এর আগে নিজেদের কাজটাও করে রাখতে চান ক্রিকেটাররা, ‘মূল লক্ষ্য থাকবে, শেষ ম্যাচটি একই মানসিকতা (ভারতের বিপক্ষে যে মানসিকতায় খেলেছিলেন) নিয়ে খেলা। ভালো খেলে জিততেই চাইব। পাকিস্তানকে হারাতে পারলে ক্যালকুলেশন কী হবে, সেটি পরে দেখা যাবে। মূল লক্ষ্য পরের ম্যাচটি জেতা। ’
পরের ম্যাচের আগে আজ সূচিতে কোনো অনুশীলন রাখেনি টিম ম্যানেজমেন্ট। বিশ্রাম নিয়ে সাকিবরা নামবেন আরেকটি বড় লড়াইয়ে। এই লড়াইয়ে পাকিস্তানকে হারালেও ‘ক্যালকুলেশন’ যা, তাতে বাংলাদেশের স্বপ্নটি এখনো অলীক কল্পনাই! যা সত্যি না হলে বলেই ফেলা যায় যে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে বাংলাদেশের শেষ পুরোদস্তুর অনুশীলনটি শুক্রবারই করা হয়ে গেছে! আগামীকালও অনুশীলনের সূচি রয়েছে, তবে ঐচ্ছিক। ঐচ্ছিক অনুশীলনে, তাও ম্যাচের আগের দিন দলবেঁধে অনুশীলনে যায় না।