টুঙ্গিপাড়া, (গোপালগঞ্জ) থেকে :
গোপালগঞ্জে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক জমিতে বোরো বীজতলা করেছে কৃষক।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্ত গোপালগঞ্জ জেলার ৫ উপজেলায় বোরো ধানের আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৪ হাজার ২৭.৫ হেক্টর জমিতে বীজতলা করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। কৃষক ৪ হাজার ৩৪১ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের বীজতলা করেছে। এই বছর কৃষক ৩১৪.৫ হেক্টর জমিতে বেশি বোরো ধানের বীজতলা করেছে। এখন বোরো বীজতলা থেকে ধানের চারা তুলে জমিতে রোপণ করা হচ্ছে। অনেক কৃষক বীজতলা থেকে বোরো ধানের চারা তুলে বাজারে বিক্রি করছেন। এতে তাদের হাতে নগদ অর্থ মিলছে।
গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণের উপ-পরিচালক ড. অরবিন্দ কুমার রায় বলেন, আমরা এ বছর বোরো ধানের আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৪ হাজার ২৭.৫ হেক্টর জমিতে বীজতলা করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করি। কৃষক ৪ হাজার ৩৪১ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের বীজতলা করেছে। এ বছর কৃষক ৩১৪.৫ হেক্টর জমিতে বেশি বোরো ধানের বীজতলা করেছে। এরমধ্যে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় ১ হাজার ২৮৫ হেক্টর, মুকসুদপুরে ৬৮২ হেক্টর, কাশিয়ানীতে ২১০ হেক্টর, কোটালীপাড়ায় ১ হাজার ৬৫০ হেক্টর ও টুঙ্গিপাড়ায় ৫১৪ হেক্টর জমিতে বীজতলা করা হয়েছে।
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, এ চারা দিয়ে জেলার ৮০ হাজার ৫৪৬ হেক্টর জমিতে বোরোধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে জেলার ৫ উপজেলায় উৎসবের আমেজে বোরোধান রোপন শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় ২২৫ হেক্টর, মুকসুদপুরে ১১৫ হেক্টর, কাশিয়ানীতে ২৫০ হেক্টর, কোটালীপাড়ায় ৯৩৪ হেক্টর ও টুঙ্গিপাড়ায় ১ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। সোমবার পর্যন্ত জেলায় মোট ৩ হাজার ৪ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। বাদবাকী জমিতেও পুরোদমে বোরোধানের আবাদ চলছে।
গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণের ডিডি ড. অরবিন্দ কুমার রায় বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশের সকল অনাবাদি পতিত জমিতে চাষাবাদ করার জন্য দেশবাসীকে আহ্বান জানিয়েছেন। কোথাও এক ইঞ্চি জমিও যেন খালি না থাকে-এ নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় কৃষকরা বোরোধানের আবাদ বৃদ্ধিতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি জমিতে বীজতলা করেছে। বীজতলা থেকে কৃষক ধানের চারা তুলে বাজারে বিক্রি করছে। এতে তারা অর্থ পাচ্ছেন। আমরা ধারণা করছি এ বছর প্রধানমন্ত্রীর আহবানের কারণে গোপালগঞ্জে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি জমিতে বোরোধানের আবাদ হবে।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোপীনাথপুর গ্রামের কৃষক হেমায়েত উদ্দিন খোন্দকার বলেন, আমি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরাামর্শে ২৫ শতাংশ জমিতে বোরোধানের আদর্শ বীজ তলা করেছি। এখানে ভালো চারা হয়েছে। এ চারা দিয়ে জমি রোপণ শুরু করেছি। গত বছর ২ একর জমিতে ধান করেছিলাম। এবছর প্রধানমন্ত্রীর আহবানে সাড়া দিয়ে আড়াই একর জমিতে ধানের চাষাবাদ করব। অতিরিক্ত ধানের চারা বাজারে বিক্রি করছি। এতে ভালো অর্থ পাচ্ছি। ধান চাষে এ অর্থ কাজে আসছে।
কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নিটুল রায় বলেন, ধানের চাষাবাদ বৃদ্ধিতে আমরা কৃষককে ধানবীজ ও সার প্রণোদনা হিসেবে দিয়েছি। এর পাশাপাশি তাদের আমরা প্রশিক্ষণ এবং পরামর্শ দিয়েছি। তারা আমাদের পরামর্শ কাজে লাগিয়ে বোরোধানের চাষাবাদ বৃদ্ধিতে কাজ করছেন। বেশি বীজতলা করেছেন। এখন তারা বোরোধান আবাদ করছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে তারা অধিক ফসল ফলানোর ওপর জোর দিয়েছেন। আনাবাদি ও পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় আনতে তারা দিন রাত কাজ করে যাচ্ছেন। আমরা আশা করছি এবার রেকর্ড পরিমান জমিতে ধানের আবাদ হবে।
কোটালীপাড়া উপজেলার মাচারতারা গ্রামের কৃষক হরেকৃষ্ণ সিকদার (৫৮) বলেন, আমরা জলাবদ্ধ ও পতিত জমিতে ধান ও সবজি ফলিয়ে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করব। কৃষি বিভাগের দিক নির্দেশনায় সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি। প্রধানমন্ত্রীর মুখ উজ্জ্বল করতেই আমদের এ উদ্যোগ।