ডেস্ক রিপোর্ট:
রাত তখন সোয়া ২টা। মহাখালী ফ্লাইওভারে গাড়ি থামিয়ে ছিনতাইয়ের চেষ্টা চালান এক র্যাব সদস্যসহ চারজন। প্রাইভেট কারে থাকা দুজনকে হাতকড়া পরিয়ে মারধর শুরু করেন তারা। এ সময় ওই দুই ব্যক্তি বাঁচানোর জন্য চিৎকার শুরু করেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই লোকজন জড়ো হয়ে যায়। চলে আসেন এক পুলিশ সদস্য। বেসরকারি একটি টেলিভিশনের গাড়িও পৌঁছায় সেখানে। একজন ৯৯৯-এ ফোন করে জানান পুলিশকে। জড়ো হওয়া লোকজন ছিনতাইচক্রের একজনকে ধরে ফেলে। র্যাব সদস্যসহ অন্য দুজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। পরে বনানী থানার পুলিশ পালিয়ে যাওয়া তিনজনের মধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। আরেকজনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন আরিয়ান আহমেদ জয় (২৩), আল মোমেন (২৬) ও মো. ফরহাদ হোসেন (২২)। তাদের মধ্যে আল মোমেন র্যাবের সদস্য। ঘটনার সময় তাদের গায়ে র্যাবের কটি পরা ছিল বলে জানা গেছে। তাদের কাছ থেকে একটি খেলনা পিস্তল, স্টিলের তৈরি হাতকড়া, র্যাবের একটি কটি ও ছিনতাইকাজে ব্যবহৃত প্রাইভেট কার উদ্ধার করা হয়েছে।
ভুক্তভোগীদের মধ্যে রয়েছেন ট্র্যাভেল এজেন্সি ব্যবসায়ী শহীদুল ইসলাম ও তার ভাগ্নে মো. রিয়াজ। এ ঘটনায় শহীদুল ইসলাম বাদী হয়ে গতকাল বনানী থানায় একটি ছিনতাই মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় তিনি উল্লেখ করেছেন, শুক্রবার রাত ১০টার দিকে বন্ধু তারিকের সঙ্গে দেখা করার জন্য ভাগ্নে রিয়াজকে নিয়ে একটি প্রাইভেট কার দিয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান শহীদুল। সেখানে বন্ধুর সঙ্গে দেখা করে রাত পৌনে ২টার দিকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা করেন। সোয়া ২টার দিকে শহীদুলদের বহনকারী প্রাইভেট কারটি মহাখালী ফ্লাইওভারে ওঠে। সঙ্গে সঙ্গে ছিনতাইচক্রের সদস্যদের ব্যবহৃত প্রাইভেট কার শহীদুলের গাড়ি আটকে দেয়। প্রাইভেট কার থেকে তিনজন নেমে শহীদুলদের গাড়িতে গিয়ে পিস্তল তাক করে মালামাল লুটের চেষ্টা চালায়। এ সময় শহীদুল ও রিয়াজ বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার শুরু করেন। এ সময় আশপাশ থেকে লোকজন জড়ো হয়ে যায়। জড়ো হওয়া লোকজন আরিয়ান আহমেদ জয়কে আটক করে। অন্যরা প্রাইভেট কার নিয়ে পালিয়ে যায়। ওই সময় শহীদুল ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে পুলিশের সহযোগিতা চান। সঙ্গে সঙ্গে বনানী থানার এসআই মীর মো. মাহফুজুর রহমানের নেতৃত্বে একটি টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে জয়কে আটক করে। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয় র্যাব সদস্য মোমেন ও তার সহযোগী ফরহাদ হোসেনকে।
শহীদুল গণমাধ্যমকে বলেন, “ওরা আমাদের গাড়ি থামিয়ে জানালা দিয়ে পিস্তল ধরে। গাড়ি থেকে বের হওয়ার পর বলে, আমরা সোনা চোরাচালানকারী। আমরা বলি, ‘আমাদের চেক করে দেখেন।’ তখন আমাদের মারধর শুরু করে। বলে, ‘গুলি করে মেরে ফেলব।’ তারপর হাতে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে দেয়। এ সময় আমরা চিৎকার শুরু করি।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বনানী থানার ওসি নূরে আজম মিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, পলাতক আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। আগামীকাল (রবিবার) গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ড চাওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারের পর পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র্যাব সদস্য মোমেন জানিয়েছেন, তাদের কাছে তথ্য ছিল প্রাইভেট কার দিয়ে যারা যাচ্ছিলেন তাদের কাছে স্বর্ণের বার রয়েছে। লোভে পড়ে এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন তিনি। তার দাবি, গ্রেপ্তারকৃতদের একজন তার আত্মীয়, অন্যজন তার বন্ধু।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শহীদুলদের বহনকারী গাড়িটি আটকানোর সময় সেখানে চলে আসে বেসরকারি একটি টেলিভিশনের গাড়ি। সংবাদকর্মীরা চিত্রও ধারণ করেন। লোকজন জড়ো হয়ে গেলে সেদিক দিয়ে মোটরসাইকেলে যাওয়া সাকিব নামের এক পুলিশ সদস্যও তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন।
সাকিব গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তিনজন দুই ব্যক্তিকে ধরে মারধর করছিলেন। দুই ব্যক্তি বাঁচানোর আকুতি জানাচ্ছিলেন। পুলিশ দেখে তিনজনের একজন গাড়ির পেছনে পিস্তল রেখে রাস্তা পার হয়ে চলে যান, আরেকজন দৌড়ে পালিয়ে যান।’ ধরা পড়ার পর জনতার হাতে ধরা পড়া জয় গণমাধ্যমকে জানান, তিনি টঙ্গীতে একটি গার্মেন্টে চাকরি করেন। মোমেন নামের এক র্যাব সদস্যের সাথে মাদক সংক্রান্ত কিছু কাজে করতে গিয়ে তার পরিচয় হয়। পরে মোমেন তাকে দিয়ে আরো কিছু কাজ করান। ঘটনার দিন একটি অপারেশনের কথা বলে মহাখালী ফ্লাইওভারে নিয়ে আসেন।
জানা গেছে, গ্রেপ্তার র্যাব সদস্য সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য। তাকে বাহিনীর আইনে বিচার করা হতে পারে বলে জানা গেছে।